রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ অপরাহ্ন
কালের খবর: ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি একেএম শামীম ওসমানের। তাকে রাজনীতির চৌকষ পুরুষ বলে দাবি করেন তার অনুগত নেতাকর্মীরা। সিংহ পুরুষ হিসেবেও পরিচিত রয়েছে তার। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের মধ্যে কেউ তাকে সমীহ করেন কেউ আবার ভয়ও করেন।
শামীম ওসমান কোন প্রতিপক্ষকে কখনো ভয় করেন না। তার সাথে যতো ঝামেলা বাঁধে সব তার দলেরই। সবচেয়ে বেশী ঝামেলা হয়েছে ৩ নারীর সাথে। আর এই তিনজনই আওয়ামীলীগের নেত্রী। এক জন প্রয়াত অধ্যাপিকা নাজমা রহমান, আরেক জন সংসদ সদস্য ছিলেন সারাহ বেগম কবরী, আর বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
দলীয় সূত্র মতে, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। নৌকা মার্কায় তিনি নির্বাচন করলেও তখন শামীম ওসমান ও তার অনুগতরা তার পক্ষে কাজ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ‘৯৬’র আওয়ামীলীগ আমলে অধ্যাপিকা নাজমা রহমান যখন জেলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রি তখন শামীম ওসমান ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। এক সাথে এক মঞ্চে থাকলেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সবসময়ই লেগে ছিলো। অভিযোগ রয়েছে, নাজমা রহমানকে লাঞ্চিত পর্যন্ত করা হয়েছিলো। শহরবাসী যা জানেন ‘দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ’ হিসেবে।
৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার অনেক দিন পর দেশে ফিরেন শামীম ওসমান। ওই সময় তার আসন অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দলীয় এমপি ছিলেন তারই চাচী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কবরী। তবে চাচী কবরীর সাথে সম্পর্কটা খুব ভালো যায়নি শামীম ওসমানের। সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিলো এই দুই আওয়ামীলীগ নেতার মধ্যে। বাস ভাড়া নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে কবরীর সাথে শামীম ওসমানের ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। ওইদিনের ঘটনার ভিডিও চিত্র বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে প্রচার হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারা দেশে।
শামীম ওসমানের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় আরেক নারী জনপ্রতিনিধির সাথে। আগে থেকে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকলেও ২০১১ সালের এনসিসি নির্বাচনের পর থেকে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে নতুন করে বিবাদ সৃষ্টি হয় তার। ওই নির্বাচনে আইভীর কাছে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত হয় শামীম ওসমান। হারলেও আইভীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে মাঠে নামেন শামীম ওসমান। আবার ডা. আইভীও সুযোগ পেলেই শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। নির্বাচন ছাড়াও ত্বকী হত্যার পর এ দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। শেষতক শহরের হকার ইস্যু নিয়ে দুইজনের মধ্যে থাকা বিবাদ তুমুল সংঘর্ষে রূপ নেয়। যা নিয়ে বিব্রত হয় খোদ আওয়ামীলীগ প্রধান।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, শামীম ওসমানের জীবনে ৩ জন নারী রাজনীতিক গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপিকা নাজমা ও কবরীর সাথে তিনি পেরে উঠলেও মেয়র আইভীর সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।